কর্মসংস্থান
সৃষ্টির লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে ১৪ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে। এটি চলতি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা বেশি।
যা
এ খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। ব্যাপক কর্মসৃজনের লক্ষ্য নিয়ে এ বিনিয়োগের পরিকল্পনা
নেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য সরকারি বিনিয়োগে
(এডিপি) কোনো কৃচ্ছ্রসাধন করা হবে না।
ফলে
নতুন বছরের এডিপি কাটছাঁট ছাড়াই বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ বিভাগ। যার
প্রতিফলন দেখা যাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে।
বর্তমান
সময়ে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কোভিড-১৯ মহামারিতে সবচেয়ে
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ খাত। এই মহামারিতে কমপক্ষে আড়াই কোটি মানুষ কর্মহীন
হয়েছে, একাধিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে এমন
তথ্য উঠে এসেছে।
সেই
ক্ষত না শুকাতেই যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা অন্যান্য দেশের মতো
বাংলাদেশেও পড়েছে। এমন চ্যালেঞ্জিং সময়ে সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় বিনিয়োগের
পরিকল্পনা নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সংশ্লিষ্টদের
মতে, আসন্ন বাজেটটি বর্তমান সরকার পূর্ণাঙ্গভাবে
বাস্তবায়ন করতে পারবে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করা হবে তার
অর্ধেকের বেশি বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
ফলে
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী বাজেটে কর্মসংস্থানকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া
হচ্ছে। এছাড়া করোনার কারণেও অনেক কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের জন্য
কর্মসংস্থানের উদ্যোগ রাখা হচ্ছে। এসব কারণেই বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির
দিকে এগোচ্ছে সরকার।
জানা
গেছে, নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার সাতটি খাতের মধ্যে একটি
হচ্ছে ‘ব্যাপক কর্মসৃজন ও পল্লি উন্নয়ন’। এজন্য বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বিনিয়োগকে। যে কারণে এ বছর জিডিপির
(মোট দেশজ উৎপাদন) ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি
বাজার মূল্যে নতুন জিডিপির আকার হচ্ছে ৪৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার। ওই হিসাবে
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মোট বিনিয়োগের অঙ্ক দাঁড়ায় ১৪ লাখ ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
এর
মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ১১ লাখ ৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা (২৪ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং
সরকারি বিনিয়োগের অঙ্ক হলো ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (৬ দশমিক ৬ শতাংশ)।
এদিকে
চলতি বাজেটে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
এটি জিডিপির ৩১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থ বিভাগ আগামী বছরের জন্য ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৮
কোটি টাকা বেশি ধরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
তবে
বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন বাজেটে কী ধরনের দিকনির্দেশনা রাখা হবে সেটি
গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আগামী বাজেটে
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটি অসম্ভব কিছু নয়।
এর
জন্য অন্যান্য বিষয় যেমন ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, সুশাসনের অগ্রগতি দেখাতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ, যোগাযোগ
ও অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধান না হলে এটি অর্জন সম্ভব নয়।
জানতে
চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, করোনায় অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেকার হয়েছে অনেকে। বিশেষ করে
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এদের
ব্যাপারে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন বেশি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে নজর
দিতে হবে। গ্রামে যেসব ক্ষুদ্র প্রকল্প নেওয়া আছে সেগুলো বন্ধ করা যাবে না। এসব ক্ষুদ্র
প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
আগামী
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী
আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের স্লোগান হচ্ছে ‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের প্রত্যাবর্তন’।
অর্থ
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কর্মসংস্থান ও
বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আগামী অর্থবছরের এডিপিতে কাটছাঁট করা হবে না। কৃচ্ছ্রসাধনের
লক্ষ্যে এডিবির অর্থ খরচের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না।
কারণ
এডিপির প্রবৃদ্ধি না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। এটি না হলে মানুষের আয় হবে
না। তা না হলে ব্যক্তি খাতে উৎসাহিত হবে না। তিনি আরও বলেন, মানুষের আয় বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা মূল উদ্দেশ্য।
প্রসঙ্গত
করোনাকালীন এডিপির ২৫ শতাংশ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল অর্থ বিভাগ। অর্থ
সাশ্রয় করে স্বাস্থ্য খাতে স্থানান্তরের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু
আগামী অর্থবছরে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
এদিকে
কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এডিপি ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে
চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষের কাজের সুযোগ তৈরিতে সহজ শর্তে ও
স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ
ফান্ডে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। অর্থ বিভাগ মনে করছে, বিনিয়োগ
বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা
হয়েছে। যেখানে আনুমানিক এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে
৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি উৎপাদন ও ২৮টির
উন্নয়ন কাজ চলমান। যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি। এ অঞ্চলে আরও
৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। এ খাতে
বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। পিপিপি প্রকল্পের আওতায়
বর্তমান ৭৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে বিনিয়োগের
পরিমাণ ২ হাজার ৭৭৬ কোটি মার্কিন ডলার।
অর্থ
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে আইটি
সেক্টরে ইতোমধ্যে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। আরও ১০ লাখ লোকের
কর্মসংস্থান হবে।
এছাড়া
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা
প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন কার্যক্রমে দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের
মানুষের বিপুল কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকেও সরকার নজর দিচ্ছে।